যেভাবে করোনা আর মৃত্যু সমান তালে বাড়ছে সেখানে ডাক্তার, পুলিশ আর জরুরি বিভাগের কর্মীদের সুরক্ষা দেওয়া এই মুহূর্তে সরকারের একটা বড় দায়িত্ব এবং বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে এই সমস্যা প্রতিদিন বড় আকার ধারণ করেছে।
সরকার কাকে বাদ দিয়ে কার চিকিৎসা করবে? যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন অথবা যারা অসুস্থ তাদেরকে বাঁচানো যতটা জরুরী, ঠিক যারা এখনো আক্রান্ত হয়নি তাদেরকে আলাদা করে রাখা ও তার চেয়ে বেশি জরুরী। গত কয়েকদিনের যে অবস্থা আমরা দেখি তাতে স্পষ্ট যে বাংলাদেশ ভালো নেই।
ঢাকা শহর থেকে এই ভাইরাস যদি মফস্বল গ্রাম পর্যন্ত গিয়ে মানুষের মৃত্যু হয়, সে ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যায় যে, বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে অন্তত ১.৭ কোটি মানুষের মধ্যে ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ বর্তমান অবস্থায় টেস্ট করার পর ১০% লোকের করোনাভাইরাস ধরা পড়ছে।
বিষয়টা এমনও নয় যে একবার করোনা হলে আবার হবেনা। দক্ষিণ কোরিয়ায় সুস্থ হওয়ার পর ১৪১ জনের আবার করোনা শনাক্ত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন আমাদেরকে এই মহামারী ভোগাবে এটা নিশ্চিত। এই সময়ে আমাদেরকে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে।
সামাজিক দূরত্বের পাশাপাশি খাবারের মেনুও আমাদেরকে ছোট করতে হবে। খাবারের যে আইটেমটি একেবারেই না হলে হবে না ঠিক সেটি ছাড়া এই মুহূর্তে আমাদেরকে অনেক বেশি মিতব্যয়ী হতে হবে। কারণ পুরো সমাজ কিন্তু এই মুহূর্তে আবদ্ধ। ইচ্ছে করলেই কিন্তু পুরো সিস্টেমকে আগের মতো সচল করা যাবে না।
কল-কারখানা থেকে শুরু করে উৎপাদন সব কিছু নিম্নমুখী। তাই এখনই সময় আরেকবার চিন্তা করা, আমরা কতটুকু মিতব্যয়ী।
দুই: সম্প্রতি বিএসএমএমইউর একজন চিকিৎসকের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। এই খবর পাওয়ার পর তার ভাড়া বাসায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন স্থানীয় লোকজন। বিষয়টি খুব অমানবিক এবং অন্যায়।
ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ, প্রিন্স চার্লস এবং প্রধানমন্ত্রী বরিশ জনসনের মতো মানুষ যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন, সেখানে আমাদের দেশে কারো হলে তাকে এলাকা ছাড়তে হবে এটা কেমন বিচার? বিষয়টা যেমন অন্যায় একইভাবে যারা এর সমর্থক তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা উচিত।
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, একজন মানুষের করোনা হতেই পারে ঠিক সাধারণ একটা অসুখের মতো। আপনি বা আমি নিজেকে নিয়েই একটু চিন্তা করি। ধরুন, আমার করোনা হয়েছে। আমার বাড়িওয়ালা আমাকে যদি বাসা থেকে বের করে দেন, আর হসপিটালে গেলে আমাকে চিকিৎসা না দিয়ে যদি ফেলে রাখে, আর পরিবারের কেউ খবর না নিয়ে আমাকে কোনো খাবার না দেয়, তখন আমার কেমন লাগবে?
প্রত্যেকটা ঘটনা যদি আমরা চিন্তা করি একটা জিনিস খেয়াল করবেন, শহর, গ্রাম, শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত প্রত্যেকের ব্যবহার একই। কোনো ঘটনায় দেখা যায় একজন শিক্ষিত ডাক্তার অবহেলা করে রোগী দেখে না। আবার এমনও আছে গ্রামবাসী একসঙ্গে জড়ো হয়ে প্রবাসী সন্দেহে লঞ্চে হামলা করেছে।
সাধারণ জ্বর বা কাশির মতো এই করোনা কাকে কখন ধরবে সেটা কেউ বলতে পারে না। কিন্তু এই মহামারী সময়ে এলাকা ছাড়া, বাসাইয় তালা দেওয়া চরম একটা বৈষম্য ও অমানবিক। অথচ আমরাই কিন্তু কথায় কথায় বলি, পশ্চিমারা বর্ণবাদী। প্রবাসীর বাড়িতে হামলা অথবা করোনা রোগী সন্দেহে কোনো মানুষকে সামাজিকভাবে নিপীড়ন করাও কিন্তু বর্ণবাদী থেকে কম নয়।
একজন মানুষ হিসেবে এটা যেমন অন্যায়, ঠিক একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের জন্য সবচেয়ে বেদনার।
তিন: আমরা জাতী হিসেবে নিজেদেরকে অন্যের কাছে উপস্থাপন করতে বেশি পছন্দ করি। যেখানে বাবার হাতে সন্তানের লাশ অথবা সন্তান আসতে পারছে না বাবার কবরে, ঠিক এই মুহূর্তে বৈশাখী ড্রেস আর মুখরোচক খাবার সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করাও একটা অমানবিক কাজ।
পাঠক আপনারা খেয়াল করবেন, আপনার আশেপাশে অনেক পরিবার আছে জাতীয় এই মহামারীতে বাসায় ঠিক মতো রান্না করতে পারছে না, ঠিক সেই মুহূর্তে এই ধরণের খাবারের পোস্ট অন্যের জন্য যেমন কষ্টদায়ক তেমনি একটাও অমানবিক।
মানবিক দিক হচ্ছে আপনি যতটুকু পারেন এই সময় একটু কম খেয়ে পাশের বাসার খবর নেন। একটু খাবার পাঠান, না পারলে মানসিকভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরামর্শ দেন। একটা বিষয় মনে রাখবেন, আপনার বিপদে এই প্রতিবেশীই কিন্তু আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধু হবে।
উন্নত দেশ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার মতো দেশে এ বছর তাদের দ্বিতীয় বড় উৎসব ইস্টার সানডেতে কোনো অনুষ্ঠান উদযাপন করনি। উৎসবের আমেজও চোখে পড়েনি। তাহলে আমাদের গরিব দেশে এই বৈশাখ উদযাপন করাটা কতটুকু সমীচীন সেটা ভাবার বিষয়। দেশটা আমাদেরই, তাই আমি, আপনি, আমরা সবাই একসঙ্গে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করি। আসুন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি, করোনা প্রতিরোধ করি।
লেখক: রাশেদ শ্রাবন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (এনটিভি অস্ট্রেলিয়া), সাধারণ সম্পাদক, অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব
Thursday, April 16, 2020
Like Us on Facebook
Subscribe us on YouTube
Categories
- আন্তর্জাতিক (1)
Popular Posts
-
করোনার ওষুধ নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগে ভারতের বিখ্যাত যোগগুরু ও পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের প্রধান বাবা রামদেবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা ...
-
গ্রেফতার হওয়া রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র্যাব। সেখানে উপস্থিত থাকা কর্মকর্তাদের সাথে কথা ...
0 comments:
Post a Comment